আজ শনিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে। সমাবেশে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এক দফা দাবির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের বিলোপ।”
নাহিদ ইসলাম আরও জানান, খুব শীঘ্রই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের জন্য সর্বস্তরের নাগরিক, ছাত্রসংগঠন ও পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে সম্মিলিত মোর্চা ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।
নাহিদ বলেন, “শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, পুরো মন্ত্রিসভাকেই পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।”
নাহিদ সকলকে স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে যোগদান ও পাড়ায়-পাড়ায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি কাল থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
আরোও পড়ুনঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবিতে বসুন্ধরায় বিক্ষোভ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে, যা ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যুতে আরও বেগবান হয়। এ পর্যন্ত সংঘর্ষে ২১৬ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইতিমধ্যে ৯ দফা দাবি জানিয়েছিল। এবার এক দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সমাবেশে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন।
আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। আজকের কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ মিনারে একত্র হন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদকদের মতে, আজ দুপুর আড়াইটার পর থেকে শহীদ মিনারে দলে দলে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হন। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যার ফলে শহীদ মিনার চত্বর ও আশপাশের এলাকা ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায়।
ঢাকার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও বিক্ষোভ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফ আলোচনার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়াও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও আলোচনায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার জানিয়েছেন, “এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।”